হাত থেকেও পারবেন বাঁচাতে!
আমরা মূলত গুগলের সার্ভিস ব্যবহার করে ফোন ট্র্যাক করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। তবে তার সাথে সাথে ট্র্যাকিং এর জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি জনপ্রিয় সফটওয়্যার সম্পর্কেও জানব। চলুন, শুরু করা যাক!
গুগলের সার্ভিস ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অবস্থান যেভাবে খুঁজে বের করবেন
বর্তমানে অধিকাংশ অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে Find My Device (যা আগে Android Device Manager নামে পরিচিত ছিল) ফিচারটি Built in হিসাবেই দেওয়া থাকে। এই সার্ভিস চালু করা থাকলে এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার ফোনের অবস্থান ট্র্যাক করা থাকবে, যাতে কোনো কারণে আপনার ফোন হারিয়ে গেলে আপনি অন্য আরেকটি ডিভাইস থেকে আপনার গুগল একাউন্টে প্রবেশ করে ফোনের অবস্থান জানতে পারেন, চাইলে আপনার ফোনটিকে লক করে দিতে পারেন, এমনকি আপনার ফোনের সকল তথ্য মুছেও দিতে পারেন দূরে বসে থেকেই।
কিন্তু এই সব কিছুই বৃথা হবে যদি আপনার ফোনে এই সার্ভিসটি চালু না করা থাকে। তাই প্রথমে আমাদেরকে এই সার্ভিস চালু করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
যেভাবে ফোনে Find My Device সার্ভিসটি চালু করবেন
নতুন অ্যান্ড্রয়েড ফোনগুলোতে Find My Device সার্ভিসটি Settings এপ্লিকেশনে আগে থেকেই দেয়া থাকে। তবে আপনি যদি সেটা খুঁজে না পান তাহলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। Google Play Store থেকে আপনি যেকোনো সময় এই অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করতে পারবেন। এই সার্ভিসটি সক্রিয় করার জন্য যা করতে হবে:
১. ফোনের Settings এ প্রবেশ করুন।
২. Security অপশনে যান।
৩. Device Administration অপশনে প্রবেশ করুন।
৪. Find My Device নামে যে অপশনটি আছে সেটিতে টিক মার্ক করুন অর্থাৎ চালু করুন।
শুধুমাত্র এই অপশনটি সক্রিয় করে ফেললেই কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যায়নি। একই সাথে ফোনের Location যাতে নিখুঁতভাবে ট্র্যাক করা যায় সেই ব্যবস্থাও তো করতে হবে! Location Accuracy এর জন্য যা করতে হবে:
১. পুনরায় Settings এ যান। সেখান থেকে Location অপশনে প্রবেশ করুন। উপরে ডানে দেখুন এটি চালু করা আছে কিনা। চালু না করা থাকলে সেটিকে সক্রিয় করুন।
২. এখন Mode অপশনে ক্লিক করে High Accuracy নির্বাচন করুন।
৩. পুনরায় Location এ ফিরে যান এবং Google Location History নামের যে অপশন আছে সেটিতে প্রবেশ করুন। Use Location History নামে একটি অপশন পাবেন, সেটিকে চালু করে নিন।
এসব ধাপ একে একে শেষ করলে আপনার ফোন তার অবস্থান জানানোর জন্য প্রস্তুত। তবে একটি ব্যাপার মাথায় রাখবেন, এই সার্ভিসটি কাজ করার জন্য আপনার ফোনের Wifi কিংবা ডাটা কানেকশন সক্রিয় থাকতে হবে।
Find My Device এবং ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে যেভাবে হারানো ফোন বের করবেন
১. যেকোনো ল্যাপটপ/স্মার্টফোনের ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে এই লিংকে প্রবেশ করুন।
২. আপনার গুগল একাউন্ট অর্থাৎ জিমেইল একাউন্ট দিয়ে লগ ইন করুন।
৩. যদি আপনি একই গুগল একাউন্ট কয়েকটি ডিভাইসে ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনি ডিভাইসগুলোর একটি তালিকা দেখতে পাবেন। সেই তালিকা থেকে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে সেই ডিভাইসটিকে, যে ডিভাইসটির অবস্থান আপনি জানতে চান।
আপনি যখন একটি ডিভাইস নির্বাচন করবেন তখনই গুগল ম্যাসের মাধ্যমে আপনি আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনের অবস্থান দেখতে পাবেন। একইসাথে আপনি ৩টি ভিন্ন অপশন দেখতে পাবেন।
১. “Play Sound” নামের অপশনটি বাছাই করলে আপনার ফোন একটানা ৫ মিনিট মিউজিক বাজিয়ে যাবে। এমনকি Silent Mode এ থাকাকালীন সময়েও এই অপশন কাজ করবে। আপনার চুরি হয়ে যাওয়া ফোন খুঁজতে অবশ্য এই অপশনের কোনো কাজ নেই। কিন্তু আপনার নিজের বাড়িতে যদি ফোন হারিয়ে যায় তাহলে সেটি খুঁজে বের করার জন্য এই সার্ভিসটি মোক্ষম।
২. “Lock” অপশন নির্বাচন করে আপনি ফোনকে লক করে দিতে পারবেন এবং তার সাথে ফোনের ডিসপ্লেতে একটি মেসেজও রেখে দিতে পারবেন। যদি আপনার ফোনে আগে থেকে কোনো সিকিউরিটি লক না দেওয়া থাকে তাহলে এই সার্ভিসটি খুব কাজে দেয়।
৩. “Erase” অপশনটি বাছাই করলে আপনার ফোনটির সকল ডাটা মুছে যাবে; যাকে আমরা সাধারণত Format বলে থাকি। তবে মনে রাখবেন, এই অপশনটি বাছাই করলে একইসাথে আপনার গুগল একাউন্টের সমস্ত তথ্যও ঐ ফোন থেকে মুছে যাবে। যার ফলে আপনি সেটিকে আর ট্র্যাকও করতে পারবেন না। তবে আপনার কোনো গোপনীয় ডাটা যদি সেই ফোনে থেকে থাকে তাহলে এই অপশন নির্বাচন করার কোনো বিকল্প নেই।
ফোন খুঁজে বের করার জন্য কয়েকটি জনপ্রিয় থার্ড-পার্টি অ্যাপ্লিকেশন
গুগলের Built in সার্ভিসটি যদিও সর্বাধিক জনপ্রিয়, তবুও Google Play Store এর কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশনের কথা না বললেই নয়। এসব অ্যাপ্লিকেশন Find My Device থেকেও কিছু বেশি সার্ভিস অফার করছে। এদের যেকোনো একটি আগে থেকে ফোনে ইন্সটল করে রাখলে যে একটু বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Where’s My Droid
ফোন হারিয়ে গেলে ট্র্যাক করার সুবিধাসহ এই অ্যাপ্লিকেশনে আছে আরও কিছু বাড়তি সুবিধা। এতে জরুরি অ্যালার্ম বাজানোর একটি ফিচার আছে, যা আপনি একটি নির্দিষ্ট মেসেজ আপনার হারিয়ে যাওয়া ফোনে পাঠালে সেটি বেজে উঠবে। এছাড়া এতে Stealth Mode নামে একটি সুবিধা আছে, যা আপনার হারানো ফোনে যাওয়া সকল ধরনের টেক্সট মেসেজ লুকিয়ে রাখবে। এছাড়াও এতে সিম কার্ড মনিটর করার একটি সুবিধাও রয়েছে। এই ফিচারটি চালু করা থাকলে আপনার ফোনের সিম কার্ড বদলে ফেলা মাত্রই একটি স্বয়ংক্রিয় ইমেইল পাঠাবে ফোনের প্রকৃত মালিককে।
এই অ্যাপ্লিকেশনের আরও কিছু ফিচার রয়েছে যা Pro ভার্সনে পাওয়া যায়। তবে ফ্রি ভার্সনেও প্রয়োজনীয় সবকিছুই দেয়া আছে।
Cerberus Anti Theft
এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে আপনি হারিয়ে যাওয়া ফোনটিকে দূরে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এটি ব্যবহার করে আপনি আপনার ফোনকে ট্র্যাক করতে পারবেন, মেসেজের মাধ্যমে কোড পাঠিয়ে আপনার ফোনটিতে সিকিউরিটি লক দিয়ে দিতে পারবেন, এমনকি মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যবহার করে চোরের মুখশ্রীর ছবিও নিতে পারবেন! সিম কার্ড পরিবর্তিত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমেইল কিংবা মেসেজ পাঠানোর সুবিধাও রয়েছে এই অ্যাপ্লিকেশনে। এসব সুবিধার সাথে সাথে এই সফটওয়্যারকে ফোনের App Drawer থেকে লুকিয়ে রাখার সুবিধাও আছে। Cerberus অ্যাপ্লিকেশনটির কোনো ফ্রি ভার্সন নেই। পাঠকরা অবশ্য চাইলে এক সপ্তাহের জন্য ফ্রি ট্রায়াল দিতে পারবেন। তবে সময় শেষ হওয়ার পর ব্যবহার করার জন্য সফটওয়্যারটি টাকা দিয়ে আপগ্রেড করে নিতে হবে।
পাঠক, অনেক কিছু তো জানা গেল, এবার একটু খোলামেলা কথা হয়ে যাক। আপনার ফোন যদি পেশাদার কোনো চোরের হাতে পড়ে তাহলে একে ট্র্যাক করাটা বেশ কষ্টকর হবে। পেশাদার চোরেরা ফোন পেলে কোনো সিম কার্ড তো রাখেই না, বরং ব্যবহারের আগে নতুন করে ফার্মওয়্যার ইন্সটল করে ব্যবহার করে। সেক্ষেত্রে এখানকার কোনো সফটওয়্যারই কাজে আসবে না বলা বাহুল্য। কিন্তু আনাড়ি চোরের কাছে আপনার ফোন যাবে না সেটাই কে বলতে পারে। অন্ততপক্ষে সেই সময়ে চোরকে কাবু করার জন্যও এই সার্ভিসগুলো চালু করে রাখতে পারেন।
তাছাড়া মনে রাখবেন, সবসময় চুরি কিন্তু ফোনের জন্য হয় না, আপনার ডিভাইস থেকে ডাটা চুরি করার উদ্দেশ্যেও হতে পারে! সেটি হলে দূর থেকে বসে আপনার ডিভাইসটি লক বা ফরম্যাট করার সুবিধাও অনেক কিছু! অন্তত ব্যক্তিগত ডাটা তো বেহাত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে!
No comments:
Post a Comment