Friday, August 10, 2018

স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ! আপনিও পারবেন স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে । আসুন জেনে নেই...


আমাদের ঘুমের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে স্বপ্ন। স্বপ্ন আমার কেন দেখি বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি না বুঝলেও, বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন আমাদের মস্তিষ্কের প্রতিনিয়ত জমা হওয়া বিভিন্ন ঘটনার দৃশ্য, সেগুলোর অনুভূতি আর চিন্তাভাবনার এক মিলিত একটি রূপ হচ্ছে স্বপ্ন
। যেটা আমাদের অবচেতন মন ঘুমের নির্দিষ্ট পর্যায়ে দেখিয়ে থাকে।
ওনায়োলজি হচ্ছে স্বপ্নের উপর এক ধরনের পড়াশোনা। সেখানে স্বপ্নের উপর বিভিন্ন চমকপ্রদ তথ্য স্বপ্নের পাওয়া যায়। সাধারণত ঘুমের চতুর্থ স্তরে আমরা স্বপ্ন দেখে থাকি। বলা হয় ঘুমের চতুর্থ স্তরে আমাদের মস্তিষ্ক সবথেকে গভীরতর পর্যায়ে পৌঁছায়। আর তখন আমাদের অবচেতন মন স্বপ্ন দেখিয়ে থাকে। তবে স্বপ্নের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভাগ। যেমন লুসিড স্বপ্ন আর ভিভিড স্বপ্ন। লুসিড স্বপ্নগুলো সাধারণত আপনি বুঝতে পারেন যে, আপনি স্বপ্ন দেখছেন। অনেকসময় দেখা যায়, সেসময়ে স্বপ্নের মধ্যে হাঁটাচলা করতে গেলে আমরা দেহ বাস্তবে নড়েচড়ে ওঠে। আর ভিভিড স্বপ্নগুলোতে আমরা ঘ্রাণ, স্পর্শ, স্বাদ এসব অনুভব করতে পারি। উল্লেখ্য যে, ভিভিড স্বপ্নগুলোতে আমরা সাধারণত বুঝিতে পারি না তখন আমরা স্বপ্ন দেখছি।
আমাদের অনেকের স্বপ্ন রঙ্গিন আর সুন্দর হলেও অনেকেই দেখি বাজে বাজে বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন। মাঝেমধ্যে হয়তো নিজেকেই প্রশ্নই করে বসি, কেন এমন বাজে বাজে স্বপ্ন দেখলাম। এমনটা না দেখলেও তো হতো। আবার অনেকে করি দুঃশ্চিন্তা। স্বপ্ন ভবিষ্যতের কথা জানায় এটা আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি।
আচ্ছা যদি এমন হতো যে আমরা আমাদের স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারি, তাহলে কেমনটা হতো? শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব নয়। নিচের টিপসগুলো ফলো করলে আপনিও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আপনার অদেখা স্বপ্নগুলো।

১. মোটিভেশন এবং লক্ষ্য ঠিক করা

প্রথমে আপনার যেটা জানা দরকার সেটা হচ্ছে আপনার নিয়ন্ত্রণের শুরু হবে লুসিড স্বপ্ন হতে। ভিভিড স্বপ্নগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণ করতে বেশিদিন সময় লাগেলও অসম্ভব নয়। আর লুসিড স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্য নিয়ে আপনি মাঠে নামলেও দেখা যাবে বেশ কিছুদিন প্রচেষ্টার পরেও কোনো ফলাফল হচ্ছে না।
মূলত এই সময়টাতে হাল ছাড়া যাবেনা। কারন প্রতিজনেরই শুরুটা এভাবে যায়। তাই সর্বপ্রথম আপনার লক্ষ্য দৃঢ় রাখতে হবে এবং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

২. বিশ্রাম এবং ঘুমানোর পদ্ধতি

আপনি কিভাবে ঘুমাচ্ছেন এটা স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বপ্ন দেখার উপর বেশ প্রভাব ফেলে। আপনাকে এমন ভাবে ঘুমাতে হবে যাতে সত্যিকারের বিশ্রাম আপনার দেহ পায়। সহজভাবে বললে ধরুন সোফাতে বেকায়দায় ঘুমালে সেটা নিশ্চয়ই আপনার শরীরের জন্য উপকারী নয়। তাই আরামদায়ক বিছানায় ঘুমানো গুরুত্বপূর্ণ।
এরপর বিছানায় যাওয়ার পর আত্মসম্মোহন করতে হবে। অনেকের কাছেই কথাটা নতুন। সম্মোহন কি আমরা জানি। বিভিন্ন সিনেমা আর বইয়ে দেখেছি একটি ঘড়ি দিয়ে মানুষকে সম্মোহন করা হয় আর বিভিন্ন কাজ করানো হয়। সম্মোহন অবাস্তব কিছু নয়, তবে ঘড়ির ব্যাপারটা আমাদের ফ্যান্টাসির অংশ।
আপনাকে একই ধরনের কাজ অর্থাৎ সম্মোহন করতে হবে। ঘুমানোর পূর্বে আপনি নিজেকে এই কথা বারবার ভালোভাবে বারবার বলবেন, “আমি স্বপ্ন স্পষ্ট আর পরিষ্কারভাবে দেখবো আর জানবো আমি স্বপ্ন দেখছি” বা “আমি লুসিড স্বপ্ন দেখবো”। বারবার স্পষ্ট উচ্চারণে যখন আপনি এই একই কথা অসংখ্যবার বলবেন তখন আপনার মস্তিষ্কের মধ্যে সেটা গেথে যাবে। আর স্বপ্নের এক পর্যায়ে বুঝতে পারবেন যে আপনি স্বপ্ন দেখছেন।

৩. স্বপ্নের মধ্যকার মানুষ

হতে পারে উপরের টিপসটি আপনার ক্ষেত্রে কাজে দিচ্ছেনা। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার ঘুমকে দুইভাবে ভাগ করুন। প্রথমভাগে ঘুমানোর পূর্বে উপরের টিপস অনুযায়ী আত্মসম্মোহন করবেন। আর এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে যাবেন। যখন আপনার এলার্ম বেজে ঘুম ভেঙে যাবে তখন নতুন করেন আবার আত্মসম্মোহন করবেন।
তবে এবার বলবেন, “আমি আমার স্বপ্নের মধ্যে সবকিছু অনুভব করবো। বাতাস, খাবারের স্বাদ, শব্দ সবকিছু অনুভব করবো।” সাধারণত এই আত্মসম্মোহনের পর দেখা যায় দ্বিতীয় ভাগে অনেকে লুসিড স্বপ্ন দেখে। অনেকের ক্ষেত্রে এমনও হয় স্বপ্নের মধ্যেকার কোন মানুষ বা প্রানী তাদের বলে ওঠে, “অনেক তো ভিভিড স্বপ্ন দেখেছো এবার লুসিড স্বপ্ন দেখা যাক!”

৪. আত্মসচেতনতা বাড়ানো এবং রিয়েলিটি চেক

আপনি এখন স্বপ্ন দেখছেন নাকি জেগে আছেন ? এই জিনিসটি পরীক্ষার নামই বাস্তবতা যাচাই অথবা রিয়েলিটি চেক। প্রতিদিন কিছুক্ষণ পরপর আপনি যদি এই কাজটি করতে থাকেন তাহলে আপনি স্বপ্নের মধ্যেও একই কাজ করে বসবেন। আর সাথে সাথেই বুঝতে পারবেন যে আপনি স্বপ্ন দেখছেন। এখন কথা হচ্ছে বাস্তবতার পরীক্ষা অর্থাৎ রিয়েলিটি চেক কিভাবে করবেন? এই পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন :
  1. শ্বাসপ্রশ্বাস : আপনি নাক চেপে ধরলে কি শ্বাস নিতে পারেন ?
  2. লাফ : মাটি থেকে লাফ দিলে কি ভেসে থাকেন বা আস্তে আস্তে নিচে নামেন ?
  3. পড়া : আপনি যদি কোনকিছু দ্বিতীয়বার যখন পড়ার চেষ্টা করেন তখন সেগুলো কি আগের মতোই থাকে না পরিবর্তন হয়?
  4. দৃষ্টি : সাধারনের থেকে আপনার দৃষ্টিশক্তি কিছুটা ঘোলা কিনা?
  5. স্পর্শ : একহাত দিয়ে অন্য হাতকে ধাক্কা দিয়ে সেটা সরে যায় কিনা?
  6. ম্যাজিক : আপনি উড়তে পারেন? দেয়াল ভেদ করে যেতে পারেন?
  7. প্রতিচ্ছবি : আয়নাত আপনার নিজের প্রতিচ্ছবি ঠিক রয়েছে? সাধারনের থেকে কোন ভিন্নতা রয়েছে তার মধ্যে?
  8. সুইচ : আপনার লাইট কি সুইচ টিপলেই জ্বলে নাকি না টিপলেও জ্বলে?
  9. স্মৃতি : আজকে কত তারিখ কি দিন? আর আপনি এ মূহুর্তে কি করছেন?
প্রতিদিন এই প্রশ্নগুলো নিজেকে একাধিকবার করুন। করতে করতে অভ্যাসে পরিনত করে ফেলুন। যখন এসব জিজ্ঞেস করা আপনার অভ্যাসে পরিনত হয়ে যাবে তখনই আপনি স্বপ্নের মধ্যেও এসব প্রশ্ন করবেন আর সহজেই বুঝতে পারবেন আপনি স্বপ্ন দেখছেন।

৫. নিয়ন্ত্রণ

আপনি যখন থেকে বুঝতে পারবেন আপনি স্বপ্ন দেখছেন তখন এর নিয়ন্ত্রণ করা সহজ বলা যায়। তবে একটা সমস্যা থেকে যায়। যখন আপনার মস্তিষ্ক জেনে যায় আপনি স্বপ্ন দেখছেন তখন স্বপ্নের মধ্যে চলাচল করলে বাস্তবে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেটা কোন দূর্ঘটনার কারন হতে পার।  অন্যসময় এই জিনিসটা সাধারণত হয়না কারন ঘুমের মধ্যে আমাদের শরীর এক ধরনের প্যারালাইসিস পর্যায়ে যায়। যার কারনে স্বপ্ন আমাদের বাস্তবের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা।
কথা হচ্ছে, আপনি যেই মূহুর্তে অবগত হন আপনি স্বপ্ন দেখছেন তখন সেটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়। ফলে আপনার তখনকার নড়াচড়া বাস্তবে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই তখন আপনাকে ভাবতে হবে আপনার শরীর দুইটি। একটি বাস্তবের আরেকটি স্বপ্নের।
যদিও বিষয়টি এতটা সহজ নয় আর একদিনেই শেখা সম্ভব না। তবে প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালাতে থাকলে এক পর্যায়ে আপনি আপনার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নড়াচড়া না করিয়ে স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সর্বশেষে, যদি আপনি ধারনা করে থাকেন সপ্তাহখানেক চেষ্টা করলেই স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তাহলে আপনি আশাহত হবেন। মাস তিন চার অন্তত আপনাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এতদিন ধৈর্য্য সহকারে আপনি যদি উল্লেখিত টিপসগুলো অনুসরণ করেন তাহলে আপনি পারবেন আপনার স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে।

No comments:

Post a Comment