Search This Blog

Friday, June 29, 2018

এরদোয়ান মুসলিম বিশ্বের নেতা নাকি মুখোশ পরা ইসরাইলী বন্ধু?



ইসরায়েলের সাথে তুরস্ক তথা এরদোয়ানের যে সম্পর্ক আমরা দেখি আসলে কি তাই? মাঝে মাঝে আপনার মনে হতে পারে এরদোয়ানই একমাত্র মুসলিম লিডার যে উচ্চস্বরে ইসরায়েলকে হুমকি ধামকি দিতে পারে কিন্তু কার্যত এসব কিছুই না যা আমরা দেখি তার বেশীরভাগই লোক দেখানো কথাবার্তা কাজের বেলায়
কিছুই করে না বরং তাদের সাথে সবধরনের ব্যবসা বানিজ্য চলমান এবং দিনদিন আরো প্রসার হচ্ছে

মে মাসে গাজা সীমান্তে বিক্ষোভে ইসরায়েলের গুলিতে প্রচুর ফিলিস্তিনীর মৃত্যুর পর তুরস্ক আঙ্কারা থেকে ইসরায়েলি দূতকে বহিষ্কার করে।
মুখে বাগাড়ম্বর চলতে থাকলেও ভেতরে ভেতরে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত ঠিকই ছিল।
তুরস্ক ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের কথা বলেনি, এবং কোনো চুক্তিও বাতিল করেনি।
বরঞ্চ সপ্তাহ আগে নির্বাচনে যিনি এরদোয়ানের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন -মুহাররেম ইনজে, ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে অনেক কট্টর কথাবার্তা বলেছিলেন।
কুর্দি-সমর্তক দল এইচডিপিও ইসরায়েলের সাথে সমস্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাতিল করার কথা বলেছে। কিন্তু এরদোয়ানের একে পার্টি ইসরায়েলের সাথে ব্যবসার ব্যাপারে ততটা কট্টর নয়।
এমনকী সম্প্রতি তুরস্কের পার্লামেন্টে ইসরায়েলের সাথে সমস্ত বাণিজ্য চু্ক্তি বাতিলের এক প্রস্তাব একে পার্টির ভোটে খারিজ হয়ে যায়।

এরদোয়ানের শাসনামলে (২০০৩-২০১৮) গৃহীত তুর্কি-ইজরাইল সম্পর্ক:

২০০৫ সালে ইজরাইলে গিয়ে তুর্কি-ইজরাইল সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইজরাইলকে প্রস্তাব এরদোয়ান। "ইরানের পারমাণবিক গবেষণা শুধু ইজরাইলের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি" -- এই উক্তিও করেন (যদিও ইজরাইলের ৪০০+ পারমাণবিক বোমা আছে, কিন্তু ইরান মেডিকেল সায়েন্স ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমাণু সমৃদ্ধ করলে সেটাকে বিশ্বের জন্য হুমকি মনে করেন এরদোয়ান। ইজরাইলের ৪০০+ পারমানবিক বোমাকে বিশ্বের জন্য হুমকি মনে করেন না!)




নভেম্বর, ২০০৭ সালে ইজরাইলী প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ তুর্কি সংসদে বক্তব্য দেন। যার বিরুদ্ধে অসংখ্য ফিলিস্তিনি হত্যার অভিযোগ রয়েছে এবং ইসরায়েলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয় ৷

  ২০১০ সালে (এরদোয়ানের উদ্যোগে নয়, বরং) তুর্কি বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে "গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা" জাহাজ ফিলিস্তিন অভিমুখে রওনা হয় সাহায্য নিয়ে। সেখানে ইজরাইলী সৈন্যরা হামলা করে ৯ জন তুর্কি নাগরিককে শহীদ করে। এই নিয়ে তুর্কি-ইজরাইল কূটনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হলে ২০১৬ সালে সেটা আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। ইজরাইলের সাথে এরদোয়ান নিম্নোক্ত চুক্তি করেন:

১. গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলার শহীদগণকে হত্যার দায়ে ইসরাইলকে অভিযুক্ত করে দায়ের করা মামলা তুরস্ক তুলে নেবে, ২০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে (শহীদের রক্তের সাথে বেইমানী)

২. ইসরাইলের মাধ্যমে ইসরাইলের ভূমির উপর দিয়ে ইসরাইলী ব্যবস্থাপনায় গাজায় সাহায্য পাঠাবে তুরস্ক, তাও আবার যদি ইসরাইল সেটাকে “নিরাপদ মনে করে” (?! অর্থাৎ, হে প্রভু ইসরাইল, তুমি গাজাবাসীদের নিয়মিত ভিত্তিত হত্যা করতে থাকো। আর আমি ওদেরকে একটু একটু খাদ্য-বস্ত্র সাহায্য দেব। একদিকে আমি খাওয়াবো, আরেকদিকে তুমি গুলি করবে, ওকে?)। (আচ্ছা, আমি বুঝি না, কিভাবে “খলিফা এরদোয়ানের” আবেগাপ্লুত সমর্থকেরা এটা নিজেদেরকে বিশ্বাস করায় যে, ইসরাইল চুক্তি মানবে এবং গাজায় পৌঁছে যাবে তুর্কি সাহায্য?!)
________________________________________________________
এরদোয়ানের শাসনামলে তুর্কি-ইজরাইল বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি:
২০১০-২০১১, তুর্কি-ইজরাইল বাণিজ্য ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত। কিন্তু সেটা কেমন বাণিজ্য? তুরস্কে ইজরাইলী আমদানী বৃদ্ধি ৩৯%, পক্ষান্তরে ইজরাইলে তুর্কি রপ্তানী বৃদ্ধি মাত্র ১৬%।
ইজরাইলী পণ্য কেনার দৌড়ে তুরস্কে বিশ্বে ৬ষ্ঠ রাষ্ট্র। ইজরাইল থেকে সমরাস্ত্র কেনে তুরস্ক, আর সেইসাথে ইজরাইলী সৈন্যদের জন্য জামা ও জুতা বানিয়ে দেয়।
__________________________________________________________
এরদোয়ানের শাসনামলে তুর্কি-ইজরাইল সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি:

২০০৭ সালে ইজরাইলী স্যাটেলাইট ও মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের চুক্তি করে এরদোয়ান।
উভয় দেশের জল, স্থল ও আকাশপথে "মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স বিনিময়" এর চুক্তি।
তুর্কি যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক এর টেকনোলজি আপগ্রেড করে দিয়েছে ইজরাইল (মুসলমানদের বিজয়ের স্বার্থে, তাই না??)
ইজরাইলী বিমান বাহিনী তুরস্কের কনিয়াতে সামরিক ট্রেনিং প্র্যাকটিস করবে।
__________________________________________________________
ইজরাইলের বিপদে পাশে এরদোয়ান:
২০১০ সালে ইজরাইলে দাবানল (জঙ্গলে আগুন) লাগলে সবার আগে এরদোয়ান স্পেশাল বিমান পাঠান আগুন নিভানোর জন্য।
২০১৬ সালে ইস্তাম্বুলে ISIS এর বোমা হামলায় দুইজন ইজরাইলী নাগরিক মারা গেলে চিঠি লিখে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন এরদোয়ান।

উইকিপিডিয়ার এই লিংকে ক্লিক করলে  আপনি দেখতে পাবেন ইসরাইল তুরস্কের দহরম মহরম ৷



অতএব, সবাই এরদোয়ানের পক্ষে আওয়াজ তুলুন, নামাজে দোয়া করুন।


No comments:

Post a Comment