Search This Blog

Monday, July 30, 2018

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা বস্ত্র প্রকৌশল নিয়ে বিস্তারিত

বস্ত্রকৌশল কি ও কেন
শিল্প প্রতিষ্ঠানের সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। একসময় যেখানে তাঁতে বুনে কাপড় তৈরি করা হত, এখন আর সেভাবে কাপড় তৈরি করে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। কারণ এর পুরো প্রক্রিয়াটাই ব্যাপক সময়নির্ভর। তাই এখানেও মানুষ সাহায্য নিচ্ছে যন্ত্রের। সুতা থেকে পোশাক বানানোর এই প্রযুক্তিনির্ভর পুরো প্রক্রিয়াটিই বস্ত্র কৌশলের বিষয়। যেকোন আঁশ থেকে সুতা, বস্ত্র এবং রঙের মিশেল অধিকতর উপযোগী জিনিস বানানোর যে প্রযুক্তি এক কথায় তাই হলো বস্ত্রকৌশল। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বর্তমান সময়ের অনেকের কাছেই একটি পছন্দনীয় বিষয় এবং ইদানিংকালে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী বর্তমানে এই বিষয়ে বিদ্যা অর্জনে আগ্রহী। বলাবাহুল্য পোশাক রপ্তানি আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস।

  • Left
  • Center
  • Right
Remove
click to add a caption
বস্ত্রকৌশলের অবদান
বাংলাদেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে “মেইড ইন বাংলাদেশ” ট্যাগ এ ব্র্যান্ডিং শুরু করেছে। বিশ্বের ২য় বৃহত্তম জিন্স ব্র্যান্ড এইচএন্ডএম শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বছরে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার মুল্যের পন্য নিয়ে থাকে। ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রেড ওয়ান জার্সি , ন্যাটোর ক্যামোফ্লেজ ড্রেস থেকে শুরু করে ডিজেল, রিবক, নাইকি, পুমা কারা নির্ভর করে না এই দেশের টেক্সটাইল প্রোডাক্ট এর উপর?আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে টেক্সটাইল সেক্টরের পরবর্তি চীন হিসেবে ঘোষনা করেছে।

  • Left
  • Center
  • Right
Remove
click to add a caption
বস্ত্রকৌশলের শাখাসমূহ
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত ৪ টি বেসিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়। প্রক্রিয়াগুলো হলঃ
‪ইয়ার্ন ম্যনুফ্যাকচারিং‬ (স্পিনিং): আমরা সবাই জানি যে, একটা পোশাক এর মূল উপাদান হল সুতা এবং এই ধাপে প্রধানত কিভাবে ভাল এবং কোয়ালিটিফুল সুতা প্রসেস করে একটি ফ্যাশনেবল পোশাক বা যেকোন ধরনের গার্মেন্টস প্রডাক্ট তৈরী করা যায় সেটা নিয়ে বিশদভাবে কাজ করা হয় ।


  • Left
  • Center
  • Right
Remove
click to add a caption
ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং (নিটিং)‬: এই ধাপে মূলত সূতা থেকে কাপড় তৈরীর কাজ করা হয় এবং বেশ কিছু জটিল ধাপ অতিক্রম করে একটি কোয়ালিটিফুল কাপড় উৎপাদন করাই এই ধাপের উদ্দেশ্য।


  • Left
  • Center
  • Right
Remove
click to add a caption
ওয়েট প্রসেসিং‬ (ডাইং): এই ধাপে কাপড় কে পছন্দনীয় রং দেয়া হয় এবং অত্যন্তু নিখুতভাবে কাজটি করা হয় যেন কাপড় এর সাথে রঙ এর যে মিশেল সেটা অত্যন্ত টেকসই এবং গুনসম্পন্ন হয়। এই ধাপ মূলত রাসায়নিক প্রযুক্তি নির্ভর বলে এটাকে অনেকে টেক্সটাইল কেমিস্ট্রি বলেও আখ্যায়িত করেন।


  • Left
  • Center
  • Right
Remove
click to add a caption
গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং‬: উপরোক্ত তিনটি ধাপ অতিক্রম করার পর এই ধাপে মুলত sampling, fabric spreading, cutting, sewing, washing(if necessary), finishing. করা হয় এবং যেই তৈরি পোশাক আমরা পরিধান করি ,সেটার কাপড় থেকে পুরো ফিনিশিং প্রসেস পর্যন্ত ধাপগুলাতে গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারদের অবদান রয়েছে।


  • Left
  • Center
  • Right
Remove
click to add a caption
এখন শুধু পোশাক বানিয়ে বসে থাকলে হবে না বরং এর জন্য দরকার ব্রান্ডিং এবং আমদের তৈরী পোশাককে বিদেশের মাটিতে উপস্থাপন করা। এই তৈরি পোশাককে ফ্যাশনেবল করা এবং একটি সুন্দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ সময়ের মধ্যে রপ্তানী করার জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আরও দুটি শাখা জড়িত আর তা হল-
  • ফ্যাশন ডিজাইনিং: এই বিষয়ে সবারই কমবেশি ধারনা থাকায় বিস্তারিত বলার প্রয়োজন মনে করছি না।
  • টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট: গোটা টেক্সটাইল প্রসেস সম্পন্ন করার পর সেটাকে সম্পূর্ন নিরাপদে রপ্তানি করে ক্রেতার কাছে পৌছে দেবার মধ্যবর্তী সময়ে যে ধাপ গুলা অতিক্রম করতে হয় সেই ধাপ গুলোই এই বিভাগের উপজীব্য বিষয়। production process supervision, quality controlling, inventory process monitoring, facilitating marketing process, সহ আরও বিষয়গুলো এই বিভাগের সাথে জড়িত।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে সম্পূর্ন ম্যানুফ্যাকচারিং বেসড একটি প্রসেস যেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন সেটাপ থেকে শুরু করে প্রসেস কন্ট্রোল, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট , গিয়ার মেকানিজম এবং মেইন্টেনেন্স নিয়ে কাজ করতে হয়। স্পিনিং এর ইঞ্জিনিয়ারদের প্রোগ্রাম ইনপুট দেয়া জানতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথম সারির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়। নাসার বিজ্ঞানিরা যারা দীর্ঘদিন যাবত মহাকাশে মানুষ পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা অসংখ্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষনায় নিযুক্ত করে স্পেস স্যুট এবং ন্যানোফাইবার, কার্বন ফাইবারের শিল্ড তৈরীর জন্য। শুধু তাই নয়, কাপড়ের মান, রংয়ের ধরন, রংয়ের স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত করাও বস্ত্র প্রকৌশলীর কাজ। পোশাক কারখানা ছাড়াও বাংলাদেশ স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, নিট ডাইং, ডাইং ফিনিশিং, ইয়ার্ন ডাইং সব মিলিয়ে হাজারেরও অধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্যও একজন বস্ত্র প্রকৌশলীর প্রয়োজন।
Remo
চাকরির ক্ষেত্রঃ
বস্ত্র প্রকৌশলীদের চাকরির বাজারে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো -তাদের পেশা জীবন অনিশ্চিত নয়। শুধু রপ্তানি খাতে সিংহভাগ বস্ত্র জোগানোই নয়, দেশের বস্ত্র চাহিদা পূরণের জন্যই বস্ত্র প্রকৌশলীদের নানা জায়গায় রয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ। অনেকে মনে করেন, বস্ত্র কৌশলীদের চাকরি শুধু টেক্সটাইল মিলগুলোতেই সীমাবদ্ধ। শুধু টেক্সটাইল মিল নয়, তাদের চাকরির সুযোগ রয়েছে মন্ত্রণালয়, ব্যাংক, কাস্টমস, বিনিয়োগ বোর্ড, বিসিক, বিজিএমইএ, বিজিএম, জুট, রিসার্চ, তুলা উন্ন্নয়ন বোর্ড, রেশম বোর্ড, বিএমবিআই, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট, ডিজাইন, টেক্সটাইল টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি ইন্স্যুরেন্স, বায়িং হাউস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে। ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বস্ত্র প্রকৌশলীদের অপ্রতুলতার কারণে এ পেশায় রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। এছাড়াও বস্ত্র প্রকৌশলীরা ইচ্ছা করলেই পুঁজি সংগ্রহ করে নিজ উদ্যোগে স্থাপন করতে পারেন টেক্সটাইল মিল। একজন বস্ত্র প্রকৌশলীর উপার্জন মন্দ নয়। যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা সাপেক্ষে এ পেশায় প্রতি মাসে ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
কি কি পড়ানো হয়
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বর্ষভিত্তিকভাবে কোর্স পরিক্রমা চলে।
  • প্রথম বর্ষে মূলত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বেসিক ধারণাসহ পিওর সায়েন্স এর বিষয়গুলো পড়ান হয়
  • দ্বিতীয় বর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রীদের বৃহৎ পরিসরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর তত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করতে হয় যা ছাত্রছাত্রীদের কাজে প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত করতে থাকে
  • তৃতীয় বর্ষে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর আরও বিশদ পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকলজি ও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়তে হয়
  • চতুর্থ বর্ষে ছাত্রছাত্রীদেরকে মেধার ভিত্তিতে স্পেশালাইজেশনের জন্য বিষয় নির্বাচন করতে হয় । বিষয়গুলো হচ্ছে স্পেশালাইজেশন অফ ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, স্পেশালাইজেশন অফ ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং, স্পেশালাইজেশন অফ ওয়েট প্রোসেসিং, স্পেশালাইজেশন অফ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং । এছাড়াও সকল বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদের প্রোডাকশন প্ল্যানিং বিষয়ে পড়তে হয় এবং পরিশেষে নিজ নিজ বিষয়ের উপর বিভিন্ন টেক্সটাইল মিলে ইন্টার্নীর জন্য পাঠান হয় ।


  • Left
  • Center
  • Right
Remove
click to add a caption
কোথায় পড়া যাবে
বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১৪টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি টেক্সটাইল কলেজ, ৪টি ডিগ্রি পর্যায়ের কলেজ, ৩৫টি ডিপ্লোমা পর্যায়ের ইনস্টিটিউট এবং ৪০টি সরকারি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়. শিক্ষা দিচ্ছে। উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে- বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল টেকনোলজি, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি ইত্যাদি।
কেমন যোগ্যতা চাই
চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হতে হলে একজন শিক্ষার্থীর অবশ্যই বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছে তারা এই বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তির যোগ্যতা ও অন্যান্য নিয়ম ভিন্ন। তাই যার যে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিস্তারিত তথ্যাবলী জেনে নিতে হবে। তবে এই বিষয়টির প্রতি তীব্র ভালবাসা অনেক জরুরি।

Mukrimul Islam Arif

No comments:

Post a Comment